নির্বাচন প্রস্তুতির জন্য লন্ডন থেকে যে নির্দেশনা দিলেন তারেক

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত যাই হোক না কেন, আপাতত নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পাশাপাশি সেটিকে নির্বাচনী ঐক্যে পরিণত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, দলের স্থায়ী কমিটিকে যৌথভাবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি সব সময় একমত থাকবেন।

তারেক রহমান লন্ডন থেকে টেলিফোনে দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যকে ওই নির্দেশনা দেন এবং নিজের মনোভাব জানান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি লন্ডন সফরের সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেন তারেক।

অবশ্য নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটিকে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়ে রেখেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি না মিললে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না বলে স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্য একমত হন গত ১ জুনের বৈঠকে। অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে দর কষাকষির সুযোগ তৈরি হলে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে বিএনপি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নির্বাচনও ছিল। তবে আমাদের স্পষ্ট কথা, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্বাচনের আগে অবশ্যই দিতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি এখনো নির্বাচনের পথেই আছে। দলে এ জন্য প্রস্তুতিও আছে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের মনোভাবের ওপর। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চাইলে সরকারকে অবশ্যই ছাড় দিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির মতো দলে নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুতি থাকে। প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সেসব দিকে সমস্যা নেই। তবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন না দিলে নির্বাচনে যাব কি না তা সময়ই বলে দেবে।’ তিনি জানান, আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দুটিই একসঙ্গে চলছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘৩০০ আসনে বিএনপির কমপক্ষে ১২০০ আগ্রহী প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু এই প্রস্তুতিই শেষ কথা নয়। কারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি মানে গণসংযোগ মিছিল মিটিং এবং জনগণের কাছে যাওয়া। কিন্তু সেই পরিবেশ নেই। একটি থানা কমিটির মিটিং পর্যন্ত সরকার করতে দিচ্ছে না। ফলে এখনকার প্রস্তুতি আসলে মনে মনে নেওয়া।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বিএনপির মতো দলের আলাদা করে কোনো প্রস্তুতির দরকার নেই। কারণ বিএনপির নির্ভরশীলতা জনগণ এবং জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়াই এখন মূল ইস্যু। সরকার নির্বাচন করবে নাকি ক্ষমতা দখল করবে এটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। একাধিক প্রার্থীও আছে সব আসনে। সুতরাং মনোনয়নে কোনো সমস্যা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু জানান, ‘ভিশন ২০৩০’-এর আলোকে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হবে। এ জন্য সম্ভাব্য প্রস্তুতিও চলছে।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ নামক রূপকল্প প্রথমে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে ৩৭টি বিষয়ে মোট ২৫৬ দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ওই সময় দেওয়া বক্তৃতায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, রূপকল্পের আলোকেই বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত সুধীজনদের একটি দল বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য।

এদিকে আন্তর্জাতিকমানের একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে আসনভিত্তিক জরিপের কাজ চলছে তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে। লন্ডনে বসেই তিনি এসব দেখাশোনা করছেন। এ ছাড়া কারাগারে যাওয়ার আগেই খালেদা জিয়া দলের প্রভাবশালী তিন নেতাকে আসনভিত্তিক ফল পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ওই নেতারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগের তিনটি নির্বাচনের ভোটের ফল পর্যালোচনা করে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করে রাখছেন। এর সঙ্গে আসনভিত্তিক জরিপের ফল যুক্ত করে আরো একটি তালিকা তৈরি করা হবে। দলীয় সূত্র মতে, নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ওই তালিকা ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই পদাধিকারবলে ওই বোর্ডের সদস্য। তবে সাক্ষাৎকারের সময় নির্বাচনী আসনের সংশ্লিষ্ট জেলা বিএনপির সভাপতি উপস্থিত থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে সমস্যা নেই। কারণ প্রতিটি আসনে দলের একাধিক আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন। তাঁর মতে, দলের চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১৫০-২০০ প্রার্থীকে ব্যক্তিগতভাবেই চেনেন এবং জানেন। দলের স্থায়ী কমিটির নেতারাও তাঁদের চেনেন। ফলে এগুলো নিষ্পত্তি করা কঠিন কিছু নয়। আর দু-একটি ক্ষেত্রে সমস্যা হলে তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হবে। তবে সবার আগে রাজনৈতিক সংকট নিষ্পত্তি হতে হবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠ